দীর্ঘ ভ্রমণেও পিঠের ব্যথা হবে না, জানুন সহজ উপায়

দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তি আর একঘেঁয়েমি দূর করতে অনেকেই অবসর সময়ে ভ্রমণকে বেছে নেন-হোক তা দেশে বা বিদেশে, একা অথবা প্রিয়জনদের সঙ্গে। কিন্তু ভ্রমণের আনন্দ মুহূর্তেই ফিকে হয়ে যেতে পারে যদি হঠাৎ করে পিঠের ব্যথা শুরু হয়।

দীর্ঘ সময় বসে থাকা, লম্বা ফ্লাইট বা বাস-ট্রেন যাত্রা, ভারী লাগেজ টানা, কিংবা অতিরিক্ত হাঁটা-এসব কারণে মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে এবং ব্যথা দেখা দিতে পারে। ফলে যেটা হওয়ার কথা ছিল আনন্দময় অভিজ্ঞতা, তা হয়ে ওঠে বেশ অস্বস্তিকর।

তবে ভ্রমণের সময় কিছু সহজ সতর্কতা মানলেই এই ব্যথার ঝামেলা অনেকটাই কমানো সম্ভব।

১. যাওয়ার আগে আরামের পরিকল্পনা করুন
ভ্রমণে বের হওয়ার আগে সামান্য প্রস্তুতিই বড় আরাম এনে দিতে পারে। প্রথমেই আরামদায়ক জুতা ও ঢিলেঢালা পোশাক নির্বাচন করুন, যাতে দীর্ঘ সময় বসে বা হেঁটে থাকলেও অস্বস্তি না লাগে। সঙ্গে রাখতে পারেন একটি লম্বা বালিশ বা ব্যাক ব্রেস-যা বসার সময় মেরুদণ্ডকে বাড়তি সাপোর্ট দেবে। ফ্লাইটে সম্ভব হলে অতিরিক্ত পা রাখার জায়গা সহ সিট বেছে নিন। আর গাড়িতে ভ্রমণ হলে সামনের সিট নিন, যেখানে সিট রিক্লাইন ও স্ট্রেচ করার অতিরিক্ত সুযোগ পাওয়া যায়।

২. দীর্ঘ ফ্লাইটে ভালো ভঙ্গি বজায় রাখুন
বিমানের সিট সাধারণত মেরুদণ্ডের সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখার মতো সহায়ক নয়। তাই নিজের জন্য সাপোর্ট তৈরি করাই শ্রেয়। পিঠের নিচের অংশে রোল করা একটি জ্যাকেট, ছোট তোয়ালে বা ট্রাভেল পিলো চাপা দিয়ে নিন। এতে লাম্বার সাপোর্ট তৈরি হবে। পা সবসময় মেঝেতে সমান রাখুন এবং পা ক্রস করা এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে কোমর ও নিচের পিঠে চাপ বাড়ে।

সম্ভব হলে নিয়মিত সিটের রিক্লাইন বা কোণ সামান্য পরিবর্তন করুন। আর মাঝে মাঝে ঘাড়, কাঁধ ও পায়ের হালকা স্ট্রেচ-যেমন গোড়ালি ঘোরানো, কাঁধ ঘোরানো বা পিঠ সামান্য বাঁকানো, করলে পেশি শক্ত হওয়া কমে এবং ব্যথার ঝুঁকি কমে।

৩. ঘন ঘন চলাফেরা করুন
দীর্ঘ সময় বসে থাকা পিঠের পেশিতে টান ধরায় এবং রক্ত চলাচল কমিয়ে দেয়। তাই যতটা সম্ভব বিরতি নিন। প্রতি ৩০-৬০ মিনিট অন্তর হালকা করে দাঁড়ান, কয়েক কদম হাঁটুন অথবা পা ছড়িয়ে প্রসারিত করুন।

চেয়ারেই বসে কাঁধ ঘোরানো, গোড়ালি ঘোরানো বা কোমরের হালকা মোচড়-এই ছোট স্ট্রেচগুলো পেশিকে নরম রাখে এবং দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ক্লান্তি কমায়। এতে নেমে হাঁটার সময় শরীর দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে এবং অতিরিক্ত ব্যথার সম্ভাবনাও কমে।

৪. গাড়িতে দীর্ঘ ভ্রমণে পিঠের সুরক্ষা দিন
দীর্ঘ সময় গাড়িতে বসে ভ্রমণ করলে পিঠে চাপ পড়া খুবই স্বাভাবিক। তাই আসনটি এমনভাবে ঠিক করুন যাতে নিতম্ব ও হাঁটু সমান থাকে এবং পিঠের নিচের অংশে স্বাভাবিক বাঁক বজায় থাকে। প্রয়োজন হলে একটি ছোট কুশন বা ভাঁজ করা তোয়ালে কোমরের পেছনে দিন।

প্রতি এক ঘণ্টা পর থেমে কয়েক মিনিট হাঁটুন-এতে রক্ত চলাচল ঠিক থাকে এবং পেশির জড়তা কমে। ড্রাইভিংয়ের সময় খুব বেশি সামনে ঝুঁকে থাকা বা অতিরিক্ত হেলে বসা থেকে বিরত থাকুন। স্টিয়ারিং ধরার সময় হাত যেন স্বাভাবিক উচ্চতায় আরামে থাকে-এতে কাঁধ ও পিঠ দুটোই আরাম পায়।

৫. সাবধানে লাগেজ তুলুন
পিঠে চাপ পড়ার বড় কারণ হলো ভুল ভঙ্গিতে ভারী ব্যাগ তোলা। তাই ব্যাগ তুলতে গেলে আগে হাঁটু বাঁকান, ব্যাগটিকে শরীরের কাছে এনে সোজা হয়ে দাঁড়ান। তোলার সময় শরীর মোচড়ানো থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে চাকাযুক্ত ব্যাগ ব্যবহার করুন, আর ওজন বেশি হলে এক বড় ব্যাগের বদলে কয়েকটি হালকা ব্যাগ নিন-এতে পিঠে চাপ অনেক কমে যায়।

৬. ভ্রমণে আরামদায়ক সরঞ্জাম ব্যবহার করুন
ভ্রমণকে আরামদায়ক করতে কিছু ছোট সরঞ্জাম দারুণ কাজ করে। একটি কোমর সাপোর্ট কুশন বা ঘাড়ের বালিশ দীর্ঘ সময় বসে থাকার চাপ কমায়। কম্প্রেশন স্টকিংস রক্তসঞ্চালন ঠিক রাখে। আর ছোট ম্যাসাজ বল বা পোর্টেবল হিটিং প্যাড বিরতিতে ব্যবহার করলে টানটান পেশী দ্রুত আরাম পাওয়া যায়। পাশাপাশি, শরীরে পানি কমে গেলে পেশীর টান আরও বেড়ে যেতে পারে-তাই নিয়মিত পানি পান করতেও ভুলবেন না।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস

আরও পড়ুন:
দীর্ঘদিন রক্তে শর্করা বেশি থাকলে শরীরের কোন অঙ্গে কী ক্ষতি হয়
প্রতিদিন এক কাঁধে ব্যাকপ্যাক ঝুলিয়ে নিলেই ক্ষতি

এসএকেওয়াই/জেআইএম



from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/PnJRGa3
via IFTTT
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post