পানির ন্যায্যতা ও আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতায় জোর দিতে হবে

দক্ষিণ এশিয়ায় পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা জোরদারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে পানির ন্যায্যতা, নদীর অধিকার, দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলা এবং হিমালয় ঘিরে থাকা দেশগুলোর মধ্যে সমান ও সুফল বণ্টনের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত ‘হিন্দুকুশ হিমালয়ায় পানি ও জলবায়ু সহনশীলতা’ সংক্রান্ত সাব-রিজিওনাল কর্মশালায় ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তৃতাকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

পরামর্শক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পানি যুগ যুগ ধরে ইতিহাসে দেশগুলোর সম্পর্ক যুক্ত করেছে, কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম ব্যবস্থাপিত যৌথ সম্পদ হিসেবে রয়ে গেছে। তিনি জানান যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘের পানি কনভেনশন-এ যুক্ত হয়েছে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ডাটা বিনিময় ও আন্তঃসীমান্ত নদীর ন্যায্য বণ্টন বিষয়ে সক্রিয় সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।

তিনি বলেন, এই কনভেনশন আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে পারে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে বাড়তে থাকা পানি সম্পদ সংকট মোকাবিলায় পানি ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

তিনি বলেন, উজান-ভাটির পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এখন আরও স্পষ্ট। নেপাল, ভুটান বা ভারতের নদীগুলোর ওপর যা ঘটে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে, কারণ আমাদের ৯০ শতাংশ নদী উজান থেকে নেমে আসে। বন্যা, খরা, পলি জমা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড় বা নদীভাঙন, এসবই এখন আঞ্চলিক সমস্যা, যা আন্তঃসীমান্ত জলপ্রবাহের প্রভাবে সৃষ্টি হয়।

বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, প্রায় সব দেশেই নীতি, আইন ও বন্যা ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাস্তবায়নের ঘাটতি বড় বাধা হয়ে আছে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে, কয়েক দশক আগে গড়ে ওঠা বাঁধ ও নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামোর কারণে নদী ব্যবস্থায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। নদীকে জীবন্ত সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা না করে নির্মিত অনেক প্রকল্প পরিবেশগত ক্ষতি ডেকে আনছে। এগুলো পুনর্বিবেচনা জরুরি।

তিনি জানান, শিল্প বর্জ্য, অবৈধ দখল, খনন ও পরিকল্পনাহীন উন্নয়ন কার্যক্রম নদী ব্যবস্থাকে হুমকিতে ফেলছে। বাংলাদেশে নদী পুনরুদ্ধারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি নেপালের উদ্যোগকেও প্রশংসা করেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, নদী জীবন্ত সত্তা এবং তার অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের নদীগুলো শুধু সেচ, নৌপরিবহন বা বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস নয়-এগুলো জীবন ও প্রাণবৈচিত্র্যের ধারক। বাংলাদেশ ও ভারতের আদালতের কয়েকটি রায়ের মাধ্যমে নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ স্বীকৃতির বাস্তবায়নে সরকারি সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আঞ্চলিক পানিবিদ্যুৎ বাণিজ্য নতুন সহযোগিতা সৃষ্টির সুযোগ তৈরি করবে। বাংলাদেশ–নেপালের সাম্প্রতিক পানিবিদ্যুৎ চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আস্থা ও পরিবেশগত দায়িত্বশীলতার ভিত্তিতে এ সহযোগিতা এগিয়ে নিতে হবে। উজানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে, যদি আমরা সন্দেহ নয় বরং আস্থার ভিত্তিতে যৌথ কাঠামো গড়ে তুলি।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. কল্যাণ রুদ্র, ড. দেবোলিনা কুণ্ডু, অরবিন্দ কুমার; নেপালের সঞ্জীব বরাল; ভুটানের পেমা থিনলে; বাংলাদেশের ড. মো. আবদুল হোসেন এবং ইউথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বক্তব্য রাখেন।

আরএএস/এসএনআর/এমএস



from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/RL72oVP
via IFTTT
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post