শীতের বিশেষ উপাদান খেজুরের রস দরজায় কড়া নাড়ছে। এরই মধ্যে গাছিরা রস আহরণ করতে গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। গ্রামে গ্রামে গাছিদের চাহিদা বেড়েছে। সারাদেশের মতো মাগুরায়ও চলছে রস উৎপাদনের প্রস্তুতি। বরাবরই মাগুরার সুনাম আর সুখ্যাতির সাথে খেজুরের রসের নাম বিশেষভাবে সম্পৃক্ত। তাই মাগুরাকে নিয়ে শোনা যায় চিরায়ত প্রবাদ ‘মাগুরার যশ, খেজুরের রস’।
সকাল-সন্ধ্যার হালকা ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীত এখনো জেঁকে না বসলেও খেজুর রস সংগ্রহ করতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন মাগুরার গাছিরা। এখন তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন গাছ পরিষ্কার, ছাটাই এবং চাছার কাজে। তাদের এই তৎপরতায় গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এক ধরনের ব্যস্ততার আমেজ।
তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে রসের মিষ্টতা বাড়ে। তাই শীত এলেই তার সঙ্গে আসে খেজুরের টাটকা রস আর প্রিয় পাটালি গুড়ের ঘ্রাণ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাংলাদেশি গৃহিণীরা খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি করেন ঐতিহ্যবাহী পিঠা, পুলি, পায়েসের মতো নানা খাবার।
মাগুরার বড়বিলের দাউদ মিয়া প্রায় ২০ বছর ধরে খেজুরের রস ও গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী পেশাই এখনো পরিবারের মূল আয়ের উৎস। তিনি বলেন, ‘গাছ কমে গেছে। সবকিছুর দাম বেড়েছে। সাত জনের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গুড় বানাতে কাঠ, খড়ি কিনতে হয়। এতে খরচ বেড়ে যায়। প্রযুক্তির কোনো সুবিধা পেলে কাজ অনেক সহজ হতো বলে মনে করছি।’
আরও পড়ুন
শিবপুরে আখ চাষে দ্বিগুণ লাভ, কৃষকের মুখে হাসি
ফিলিপাইনের আখ চাষে সফল কালীগঞ্জের মাসুদ
শ্রীপুর উপজেলার খামারপাড়ার গাছি আ. খালেক বলেন, ‘গাছ কাটা শুরু হয়েছে। রস বের হতে ৭-৮ দিন সময় লাগবে। রস সংগ্রহের পর আমার স্ত্রী সেটি জাল দিয়ে গুড় বানান। এটা খুবই কষ্টের কাজ। তারপরও তৈরি করি। লাভ প্রায় নেই বললেই চলে। ছ্যান, দা ও ছুরির এখন দাম বেড়েছে। হাড়ির দাম বেড়েছে খুব। গুড়ের দাম কিছুটা বাড়লেও এ বছর বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবো বলে শঙ্কিত আছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে মাগুরায় প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার খেজুর গাছ আছে। গাছগুলো প্রায় দুইশ’ হেক্টর জমিতে লাগানো আছে। বর্তমানে খেজুর গাছ হ্রাস পাওয়ার কারণ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার। এ ছাড়া গাছি সংকটের কারণে জেলার চারটি উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
শ্রীপুর উপজেলার বড়বিলা গ্রামের কৃষক শরীফুল বলেন, ‘শীতের শুরুতেই নিজেদের খেজুর গাছের সঙ্গে অন্যদের খেজুর গাছ বর্গা নিই। বাণিজিকভাবে গুড় তৈরি করে গাছের মালিককে ভাগ দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে গুড় বাজারে বিক্রি করি। খেজুর গাছ কাটা বেশ কষ্টের হলেও সকালে রসভর্তি হাঁড়ি দেখলে কষ্টের কথা ভুলে যাই। তবে গুড় তৈরির উপকরণ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গুড়ের দামও বৃদ্ধি পাবে।’
অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মঞ্জু শেখ বলেন, ‘খেজুর গাছ ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হয়। ফলে গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় শীতের সকালে গাছিরা রস সংগ্রহ করে, বাঁশের ভাঁড়ে কলস বেঁধে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করতেন। এ ছাড়া খেজুরের রসের পিঠাপুলি লোভনীয়। শীতকালের বেশিরভাগ পিঠাই তৈরি হয় খেজুরের গুড় দিয়ে। বছরের এই সময়টা এলেই দেখা যায়, বাড়ি বাড়ি পিঠাপুলির উৎসবের ধুম। খেজুরের রস দিয়ে গুড় বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেও অনেকে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।’
মো. মিনারুল ইসলাম জুয়েল/এসইউ/জেআইএম
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/crSzQPv
via IFTTT