শীতের হালকা হাওয়া আসতে না আসতেই বাজারে চোখে পড়ছে রঙিন সবজির বাহার। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি হলো ফুলকপি ও বাঁধাকপি। দাম সাশ্রয়ী, রান্নায় বহুমুখী আর দারুণ স্বাদে কেউ কারও কম নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো — ফুলকপি আর বাঁধাকপির মধ্যে পুষ্টিগুণে কে এগিয়ে?
ফুলকপিতে কী আছে
এক কাপ বা প্রায় ১০০ গ্রাম কাঁচা ফুলকপিতে থাকে –
- প্রায় ২৫–৩০ ক্যালরি
- প্রোটিন ২ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৫ গ্রাম
- ফাইবার ২ গ্রাম
- ভিটামিন সি ৫১ মিলিগ্রাম
- ফোলেট ৬০ মাইক্রোগ্রাম
ফুলকপি ফোলেটের ভালো উৎস, যা শিশুর মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। এতে কোলিনও থাকে, যা মস্তিষ্কের কোষের কার্যক্রমে সহায়ক। কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি কম থাকায় ওজন কমাতে বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ফুলকপি বেশ উপকারী।

বাঁধাকপিতে কী আছে
অন্যদিকে এক কাপ কাঁচা বাঁধাকপিতে থাকে –
- প্রায় ২০–২৫ ক্যালরি
- প্রোটিন ১.৫ গ্রাম
- ফাইবার ২.৫ গ্রাম
- ভিটামিন সি ৪০ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের

বাঁধাকপি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও গ্লুকোসিনোলেটসমৃদ্ধ, যা শরীরের কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে লাল বা বেগুনি বাঁধাকপিতে অ্যান্থোসায়ানিন নামের উপাদান থাকে, যা হৃদ্যন্ত্রের জন্য উপকারী ও প্রদাহ কমায়।
তাহলে তুলনায় কে এগিয়ে
দু’টি সবজিই ক্রুসিফেরাস পরিবারের সদস্য, অর্থাৎ ব্রকলি ও শালগমের মতো ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। ফুলকপিতে কার্বোহাইড্রেট ও ক্যালরি কম, তাই ওজন কমানোর ডায়েটে এটি সেরা বিকল্প। অন্যদিকে বাঁধাকপিতে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি, যা হজমে সহায়তা করে এবং শরীরের প্রদাহ কমায়।
ফুলকপি নাকি বাঁধাকপি — এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো, দুটিই শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। একটি ওজন কমাতে সহায়ক, অন্যটি রোগপ্রতিরোধে কার্যকর। তাই শীতের মৌসুমে দুটোই নিয়মিত রাখুন আপনার খাবারের তালিকায়। একদিন ফুলকপির ভাজি, আরেকদিন বাঁধাকপির সালাদ।
তবে ফুলকপি ও বাঁধাকপি যতই স্বাস্থ্যকর হোক, সবার জন্য সমান উপযোগী নয়। কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থায় এই দুই সবজি খেলে সমস্যা বাড়তে পারে।
যাদের ফুলকপি ও বাঁধাকপি এড়িয়ে চলা উচিত
১. থাইরয়েডের সমস্যা (হাইপোথাইরয়েডিজম)
ফুলকপি ও বাঁধাকপিতে থাকে গয়ট্রোজেনিক নামের উপাদান, যা থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা কমাতে পারে। বিশেষ করে কাঁচা অবস্থায় বেশি খেলে সমস্যা বাড়ে। তাই থাইরয়েড রোগীরা এগুলো ভালোভাবে সিদ্ধ করে, সীমিত পরিমাণে খেতে পারেন।
২. গ্যাস ও পেটফাঁপার প্রবণতা থাকলে
এই দুই সবজিতে ফাইবার ও সালফার যৌগ থাকে, যা হজমে ধীর এবং গ্যাস তৈরি করতে পারে। যাদের আগে থেকেই গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) আছে, তাদের জন্য ফুলকপি ও বাঁধাকপি অস্বস্তিকর হতে পারে।
৩. কিডনি রোগী
ফুলকপি ও বাঁধাকপিতে পটাশিয়াম ও ফসফরাস থাকে। কিডনির সমস্যা থাকলে শরীর থেকে এই খনিজ বের হতে সময় লাগে, ফলে রক্তে মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। তাই কিডনি রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত এই সবজি না খাওয়া উচিত।
৪. রক্তপাতজনিত সমস্যা থাকলে
বাঁধাকপিতে থাকে প্রচুর ভিটামিন কে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। তাই যারা রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খান, তাদের জন্য এটি বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র: হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ, মায়ো ক্লিনিক, হেলথলাইন
এএমপি/জিকেএস
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/5fNKwTu
via IFTTT