বিএনপির রাজনীতিতে কী পরিবর্তন আসছে, জানালেন তারেক রহমান

নেতৃত্ব নিয়ে আপনার চিন্তাধারায় কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে? আপনি কী অনুভব করেন, অনুধাবন করেন? বিবিসি বাংলার এমন প্রশ্নে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, এই দেশ (যুক্তরাজ্য) থেকে ভালো যা কিছু দেখেছি বা শিখেছি, দেশের নাগরিক হিসেবে এবং যেহেতু আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হয়তো আমার একটি সুযোগ আছে দেশের জন্য ভালো কিছু করার।

বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল, ২০০৪ আপনি বলেছিলেন যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন। তো বিএনপির রাজনীতিতে আসলে কতটা পরিবর্তন হয়েছে; ভবিষ্যৎ বিএনপিই বা কেমন হবে?

তারেক রহমান বলেন, আমাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হচ্ছে, জনগণ, দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব। আমরা দুটো বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে খুবই গর্ব করি, অহংকার করি, একটি হচ্ছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প, আরেকটি হচ্ছে প্রবাসীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পাঠান-এই দুটোই কিন্তু বিএনপি শুরু করেছিল। আমরা দেখেছি, বিএনপির সময় শুরু হয়েছিল প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়া, একই সঙ্গে গার্মেন্ট শিল্পের প্রসার। এর বাইরেও যদি আমরা দেখি, ১৯৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষটা হয়েছিল, পরবর্তীতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন, আমরা দেখেছি কীভাবে ধীরে ধীরে দুর্ভিক্ষপীড়িত একটি দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসপূর্ণ করে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ না, অল্প পরিমাণ করে হলেও আমরা কিন্তু সেই সময় বিদেশে খাদ্য রপ্তানি, চাল রপ্তানি করেছিলাম। আর রাজনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে যদি আমরা দেখি, যেখানে একসময় সকল দলকে নিষিদ্ধ করে একটি দল বাকশাল করা হয়েছিল। আমরা দেখেছি যে, বিএনপির কাঁধে যখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে, তখন কীভাবে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চালু আবার করা হয়েছিল। কাজেই আপনি বললেন অতীত থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ইয়েস, আমরা অতীতে এই ভালো কাজগুলো করেছি। ভবিষ্যতে ইনশাআল্লাহ এই বিষয়গুলো কনসিডারেশন (বিবেচনায়) রেখেই আমরা সামনে এগিয়ে যাবো। আমাদের অন্যতম মূল লক্ষ্য হবে, ভবিষ্যৎ বিএনপির গণতন্ত্রের যে বুনিয়াদ, একটি শক্তিশালী বুনিয়াদ তৈরি করা। জবাবদিহিতা তৈরি করা।

বিবিসি বাংলার তরফে আরও প্রশ্ন করা হয় কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা অভিযোগ সবসময় থাকে, যখন যারা চেয়ারে বসে জবাবদিহিতার প্রশ্নটা তখন থাকে না, মানে এড়িয়ে যায়- এ ধরনের একটা অভিযোগ সবসময় ছিল। সব রাজনৈতিক দল বা যারাই সরকারে এসেছে?

আরও পড়ুন
ভারত স্বৈরাচারকে আশ্রয় দিয়ে বিরাগভাজন হলে আমাদের কিছু করার নেই 
বিএনপির মূলনীতি একটাই, সবার আগে বাংলাদেশ 

তারেক রহমান বলেন, দেখুন অভিযোগ থাকতেই পারে। আমি আগেই তো বলেছি, একটি বিষয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম অভিযোগ থাকতে পারে। এখন অভিযোগ নিয়ে তো আর বলা যাবে না। কিন্তু অভিযোগটা কনসিডারেশনে (বিবেচনায়) অবশ্যই রাখবো। আপনি যেহেতু আমার কাছে জানতে চেয়েছেন আমি আপনাকে এটাই বলেছি। আপনি জানতে চেয়েছেন ভবিষ্যৎ কেমন হবে? আমি আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে যা দেখেছি, বুঝেছি, জেনেছি আমি আপনার সামনে সেটিই তুলে ধরলাম। অভিযোগ এই দেশেও আছে। কিন্তু আপনি যা জানতে চাইছেন, এটিতো আমি একমাত্র সুযোগ যদি পাই, আমি ইনশআল্লাহ সুযোগ পেলে পরে তখন আস্তে আস্তে জিনিসটি প্রমাণ করা সম্ভব হবে। হ্যাঁ এটাও বাস্তবতা, প্রাগমেটিক কথা যেটা, বাস্তব কথা যেটা, আমি সুযোগ পেলে যে সাথে সাথেই বিষয়টি হবে তা না। কারণ আমি সুযোগ পেলে আপনাকেও বুঝতে হবে। আপনিও কিন্তু দেশ গঠনের একটা পার্ট। কাজেই আপনার মত এরকম লক্ষ কোটি মানুষকে বিষয়টি বুঝতে হবে। এতটুকু বলতে পারি যে, ইয়েস, উই আর কমিটেড। উই উইল ট্রাই আওয়ার বেস্ট টু ডু পারফরম বেস্ট ডু দ্যাট।

বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল, জবাবদিহিতার কথা বলছিলেন। এ প্রসঙ্গে বলি, গত ১৫ বছর আপনি নির্বাসনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ায়, এটা একটা ভিন্ন পরিস্থিতি। নেতৃত্ব নিয়ে আপনার চিন্তাধারায় কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে? আপনি কী অনুভব করেন, অনুধাবন করেন?

তারেক রহমান বলেন, গত ১৭ বছর প্রবাস জীবনে আছি এবং অনেকগুলো বছর আমি বাংলাদেশের সঙ্গে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা টাইম ডিফারেন্স, ডিস্টেন্স ডিফারেন্স তো আছেই। রিচিং ডিফারেন্স তো একটা ডিফিকাল্টিস তো আছেই। এটি একটি বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এক্ষেত্রে প্রথমেই আমি আমার পরিবার অর্থাৎ আমার স্ত্রী এবং আমার সন্তানকে এখানে ধন্যবাদ দিতে চাই। কারণ তাদের সহযোগিতা না থাকলে হয়তো এই ডিফিকাল্ট কাজটি করা আমার জন্য আরো ডিফিকাল্ট হতো। ওনাদের সহযোগিতা ছিল সেজন্য আমার পক্ষে সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে আমি আবারো ধন্যবাদ দিতে চাই আমার হাজারো- লক্ষ নেতাকর্মীকে। যারা এই ডিফিকাল্টিজের মধ্যে থেকেও আমাকে সহযোগিতা করেছেন, দলকে সুসংগঠিত রাখতে, দলকে রাজপথে নিয়ে যেতে শত অত্যাচার বাধাবিঘ্নর মাঝেও জনগণের কথা তুলে ধরতে, জনগণের দাবির ব্যাপারে সোচ্চার থাকতে। আপনি জিজ্ঞেস করেছেন মনে হয় যে, এখান (যুক্তরাজ্য) থেকে কি কি দেখেছি, শিখেছি বা জেনেছি- আমি মনে করি যে, এই দেশ থেকে ভালো যা কিছু দেখেছি বা শিখেছি, দেশের নাগরিক হিসেবে এবং যেহেতু আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হয়তো আমার একটি সুযোগ আছে দেশের জন্য ভালো কিছু করার।

বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যদি আমি ইনশাআল্লাহ সেই সুযোগটি পাই, তাহলে সেই সুযোগটিকে যতটুকু সম্ভব দেশের মানুষের জন্য বা দেশের জন্য কিছু করার, এভাবে বিষয়টিকে আমি বিবেচনা করি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সংস্কার, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এবং রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রায় দুই দশক পর প্রথম কোনো গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসি বাংলার মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি।

সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও সিনিয়র সাংবাদিক কাদির কল্লোল। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সাক্ষাৎকার দেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব আজ মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) প্রকাশ করে বিবিসি বাংলা।

এসএনআর/জিকেএস



from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/ZedcWU1
via IFTTT
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post