বাগান থেকে কুড়িয়ে পাওয়া লিচু বিক্রিতে মেতেছে দিনাজপুরে শিশুরা। তাদের সহযোগিতা করছেন মা, বোন কিংবা দাদি। রাস্তার ধারে এই দৃশ্য দেখে যে কারো মনে হবে লিচু উৎসব চলছে।
দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় রাস্তার ধারের এমন দৃশ্য এখন প্রতিদিনের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকায় অন্যান্য বারের চেয়ে এবার শিশুরা বেশি আগ্রহী এই কাজে।
দিনাজপুর জেলার বাণিজ্যিক এলাকা পুলহাট থেকে একটি রাস্তা সোজা দক্ষিণ দিক হয়ে রামসাগরের দিকে চলে গেছে। পুলহাট পেরিয়ে খানিক দূর গেলেই পাওয়া যাবে মাসিমপুর গ্রাম। যে গ্রামে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম লিচুচাষ শুরু হয়েছিল। এই এলাকার বেদানা এবং বোম্বাই লিচুর সুখ্যাতিও রয়েছে দেশজুড়ে। এই মধু মাসে মাসিমপুর এলাকার প্রধান রাস্তার দুই পাশে দেখা মিলছে নারী ও শিশুদের লিচু বিক্রির দৃশ্য।
বিদ্যালয় ছুটি থাকায় এখন লিচু ব্যবসায় মেতেছে শিশুরা। তিন কিলোমিটার জুড়ে থেমে থেমে মিলবে এমন লিচু বিক্রির দৃশ্য।
শুধু মাসিমপুর এলাকাতেই নয়, শহর থেকে সেন্ট ফিলিপ্স হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে দিয়ে কসবা হয়ে ঘঘুডাঙ্গা, দিনাজপুর শহর থেকে চিরিরবন্দর যাওয়ার রাস্তা, বিরল উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার ধারে, বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলার রাস্তার পাশে এমন দৃশ্যের দেখা মিলছে।
শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা লিচুর মৌসুমে অনেক ভোরে উঠে বেরিয়ে পড়ে লিচু সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। যে বাগানেই লিচু ভাঙা হবে সেই বাগানেই তারা পৌঁছে যায় লিচু কুড়াতে। যথারীতি লিচু কুড়িয়ে তারা জমিয়ে রাখে। তারপর সকালে কুড়িয়ে রাখা লিচুগুলো বিভিন্ন সাইজের বাটিতে নিয়ে চলে আসে রাস্তার পাশে। কুড়িয়ে আনা লিচু বাছাই করে তা বাটিতে সাজিয়ে রাখে। এসব লিচুর দাম প্রতি বাটি জাত ভেদে ৩০, ৫০, ৭০ থেকে ১০০ টাকা। এসব লিচুর ক্রেতা পথচারীরাই। লিচুর এই ব্যবসা চলবে এক মাস।
শিশুরা জানায়, লিচু বিক্রির টাকায় কারো ইচ্ছা হাতঘড়ি কেনার, কারো বা পোশাক, আবার কেউ টিফিনে খাবে পছন্দের খাবার। আবার কারো স্বপ্ন রয়েছে স্মার্টফোন ও বাইসাইকেল কেনার। ঈদে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার তালিকাও রয়েছে কারো কারো।
তামিম ইসলাম শুভ ঈদের ছুটিতে দাদাবাড়ি মাসিমপুরে এসেছে। কথা হয় তার সঙ্গে। সে জানায়, সকালে যখন লিচু বাগানে লিচু ভাঙা হচ্ছিল, তখন লিচুগুলো কুড়িয়ে রেখেছিল। বিকেলে রাস্তার ধারে বিভিন্ন সাইজের বাটিতে লিচু সাজিয়ে রেখেছে। তার দাদি তাকে লিচুগুলো কুড়াতে ও বিক্রি করতে সহযোগিতা করছে। এই লিচুগুলো বিক্রি করে টাকা জমিয়ে পছন্দের একটি সাইকেল কিনবে সে।
সেলিম নামে আরেক শিশু জানায়, লিচুগুলো বাগান থেকে সংগ্রহ করেছে। এই লিচুগুলো সে ৫০ টাকা বাটি হিসাবে বিক্রি করছে। সে জানায়, লিচুগুলো কুড়ালে বাগান মালিকরা কিছু বলেন না। লিচু বিক্রি করে পছন্দের কাপড় কিনবে সে।
মাসিমপুর গ্রামের আকাশ জানায়, বাগানে যখন লিচু ভাঙা হয়, তখন যেসব লিচু ছিঁড়ে নিচে পড়ে তারা সেগুলো কুড়িয়ে রাখে। সে এ পর্যন্ত লিচু বিক্রি করে ৩৫০০ টাকা জমিয়েছে।
কসবা এলাকার যুবক মতিউর রহমান সুমন বলেন, এটা প্রতিবছরের চিত্র। আমরা আগে দেখতাম, আমন ধান কাটার সময় শিশুরা ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান সংগ্রহ করত। ধানের ভেঙে পড়া শিষ কুড়িয়ে ধান সংগ্রহ করত। সেই ধান বিক্রি করে নতুন জামা কিনত, মেলায় বেড়াতে যেত, বই খাতা কিনত। সেই দৃশ্য এখন দেখা ভার। এখন শিশুরা আনন্দের সঙ্গে ঝরে পড়া বা ঝুট লিচু কুড়িয়ে রাস্তার ধারে বিক্রি করছে। এই দৃশ্য সেই শৈশবকে মনে করিয়ে দিচ্ছে।
সদর উপজেলার কমলপুর গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, লিচুগুলো কুড়িয়ে পাওয়া হলেও কোনো সমস্যা নেই। দামও অনেক কম। যেখানে বাজারে একশ চায়না থ্রি ২০০০ টাকা ও বেদানা লিচু ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, সেখানে এই লিচু পাওয়া যাচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। তাই পথচারীরা এই লিচু কিনে নিয়ে যায় স্বাচ্ছন্দ্যে। ২০০ বেদানা লিচু কিনলাম ২০০ টাকায়।
এফএ/জেআইএম
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/Mz93FDf
via IFTTT