এবার রাজধানী ঢাকায় গরু ও বড় পশুর লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। ঢাকার বাইরে এই দাম ১ হাজার ১৫০ টাকা। চামড়ার আকার বড় হলে দামও বাড়বে। তবে এসব দামের আওতায় কেবল লবণযুক্ত চামড়া পড়বে।
কাঁচা চামড়ার জন্য কোনো নির্ধারিত মূল্য নেই, ফলে দর-কষাকষি করেই তা বিক্রি হয়। কোরবানির পশুর চামড়া থেকে বছরের চাহিদার অর্ধেক চামড়া আসে বলে জানা গেছে।
প্রতিবছর কোরবানির মৌসুমে চামড়া বিক্রি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন অনেক মানুষ। সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ না করায় চামড়া নষ্ট হয়ে যায় আর দাম পড়ে যায় পানির মতো। এমনকি চামড়া ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। তবে একটু সতর্ক হলে এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে চামড়ার ন্যায্য দাম পাওয়া সম্ভব। কোরবানির ঈদে চামড়ার ন্যায্য দাম পেতে সংরক্ষণে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
চামড়া ছাড়ানোর সময়ই শুরু প্রস্তুতি
চামড়া সংরক্ষণের প্রথম ধাপ হচ্ছে পশুর গা থেকে সঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো। অতিরিক্ত মাংসসহ চামড়া ছাড়ালে কিংবা অসাবধানতাবশত কেটে ফেললে তার দাম কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, চামড়া ছাড়ানোর পর ৮-১০ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দেওয়া জরুরি। এতে করে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে না এবং কিছুদিন সংরক্ষণ করে ভালো দাম পাওয়া সম্ভব হয়।
চামড়ায় লবণ দেওয়া কঠিন কোনো কাজ নয়। গাছতলা, গ্যারেজ কিংবা প্যান্ডেলের মতো ছায়াযুক্ত স্থানে লবণ দিলে ভালো ফল মেলে। অতিরিক্ত গরম বা বৃষ্টির মধ্যে চামড়ায় লবণ দেওয়া ঠিক নয়।
কি পরিমাণ লবণ দিতে হবে
রাজধানীর পোস্তা এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, বড় (৩৫–৫০ বর্গফুট) চামড়ায় লাগে ৮–৯ কেজি লবণ। আরও বড় (৫৫–৬০ বর্গফুট) চামড়ায় ১০ কেজি। মাঝারি আকৃতির (২০–২৫ বর্গফুট) চামড়ায় ৫–৬ কেজি, ছোট (১৫–১৬ বর্গফুট) চামড়ায় ৩–৪ কেজি। আর এক কেজি লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা যায় দুটি ছাগল বা খাসির চামড়া। চামড়ায় মোটা দানার লবণ ব্যবহার করা হয়। এবার প্রতি কেজি লবণের দাম ১৮ টাকা। অর্থাৎ, বড় একটি গরুর চামড়া সংরক্ষণে লবণের খরচ পড়বে প্রায় ১৪৫-১৬২ টাকা।
নির্ধারিত দামে বিক্রি সম্ভব
লবণযুক্ত চামড়া হলে সহজেই সরকার নির্ধারিত দামে তা বিক্রি করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, মাঝারি আকারের (২০ বর্গফুট) গরুর চামড়া ঢাকায় বিক্রি করা যাবে ১ হাজার ২০০ টাকায়, আর ঢাকার বাইরে ১ হাজার টাকায়। কাঁচা অবস্থায় বিক্রি করলে এই দাম আরও কয়েকশ টাকা কমে যায়।
চামড়ায় লবণ দেওয়ার পর পরিবহন খরচ ও শ্রমিক মজুরি মিলিয়ে একেকটি চামড়ায় ব্যবসায়ীদের খরচ হয় প্রায় ২৯০-৩২০ টাকা। তাই তারা কাঁচা চামড়া কিনে নিয়ে অনুমান করে দর ঠিক করে।
লবণ দেওয়া সম্ভব না হলে
সবাই চামড়ায় লবণ দিতে পারবেন না। তাদের উচিত হবে চামড়া কাটার সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি আড়তে কাঁচা চামড়া বিক্রি করে দেওয়া।
রাজধানীতে পোস্তা ছাড়াও ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাব, মিরপুর, গুলশান, সাভার, কেরানীগঞ্জসহ অনেক এলাকায় চামড়ার আড়ত বসে। চামড়ায় ক্ষত না রেখে সঠিকভাবে ছাড়ানো হলে কাঁচা চামড়ারও ভালো দাম পাওয়া যাবে।
পরিবহনের নিয়ম
চামড়া নষ্ট হওয়া রোধে কিছু সরকারি বিধিনিষেধও রয়েছে। ঈদের ১০ দিন পর ঢাকার বাইরে থেকে চামড়া রাজধানীতে আনা যাবে। এর আগে বাইরে থেকে চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করা নিষেধ।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, গত বছর ঈদের প্রথম দুই দিনে সংরক্ষণের অভাবে সারা দেশে প্রায় ৫ লাখ কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল খাসি ও বকরির চামড়া।
এফএইচ/এসএনআর/এমএস
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/R1IZLjP
via IFTTT