গাজীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কটি যেন একটি মরণফাঁদ। ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি শাল-গজারি বনের ভেতর দিয়ে শ্রীপুরের মাওনা থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে। সড়কটি দুই উপজেলার মধ্যে যোগাযোগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সড়কটির বাঁকে বাঁকে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কটিতে প্রায় ২০টির মতো ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে এসব বাঁকে অর্ধশতাধিক দুর্ঘটনায় অন্তত ১২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। আহতদের মধ্যে অনেকে পঙ্গু হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ এসব দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
গত ২ আগস্ট সড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চাপার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবাড়ি মোড়ে ট্রাক, অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসের ত্রিমুখী সংঘর্ষে প্রাণ হারান একজন। ১৫ আগস্ট ভোরে কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৯২ নামক এলাকায় দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী গৌরাঙ্গ চন্দ্র মন্ডল (৪৮) নিহত হন।
এর আগে ১৮ জুলাই দুপুরে বড়চালা এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের তিনজনসহ পাঁচজন নিহত হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি সড়কের কাওরান বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় রাশেদ ও আবু বক্কর ছিদ্দিক নামের দুই ব্যক্তি নিহত হন।
আরও পড়ুন-
পূজার ছুটিতে মিরসরাই-সীতাকুণ্ডে ১৫ স্পটে যানজটের শঙ্কা
বাঁশের সাঁকো বেয়ে উঠতে হয় ব্রিজে, দুর্ভোগে ২০ হাজার মানুষ
রামুতে সম্প্রীতি ফিরলেও ভেতরে দগদগে পুরোনো ক্ষত
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কে ২০টি ভয়ংকর বাঁক আছে। এসব বাঁকে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু অধিকাংশ বাঁকে কোনো কার্যকর সংকেত চিহ্ন নেই। যেটুকু সাংকেতিক চিহ্ন রয়েছে, তাও অস্পষ্ট এবং দূর থেকে দেখা যায় না।
সিএনজিচালক আব্দুল হালিম জাগো নিউজকে বলেন, সড়কে বিভিন্ন যানবাহন ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে চলে। ইচ্ছা করলেই গাড়ি হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। বাঁকগুলো এত ভয়ংকর যে এক পাশ থেকে অন্য পাশ দেখা যায় না। বাঁকগুলোর নির্দেশক সচরাচর চোখেও পড়ে না। বিশেষ করে রাতে বেশি সমস্যার মুখে পড়তে হয়।
এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী পরিবহন চালকরা বলছেন, সড়কের বাঁকে নির্দেশক থাকলেও তা দূর থেকে দেখা যায় না। রাতের বেলা সবচেয়ে বেশি সমস্যার মুখে পড়তে হয় তাদের।
বাসচালক ইব্রাহিম মিয়া বলেন, মূলত এ ধরনের বড় বাঁকে গ্লাসের (কনভেক্স মিরর) নির্দেশক স্থাপন করা উচিত, যেন চালকেরা দূর থেকে আসন্ন বাঁকের বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন দেখতে পান এবং দুর্ঘটনা এড়াতে পারেন। সংকেত বাতি স্থাপন করা হলে সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
সড়কটির মাওনা থেকে ফুলবাড়ীয়া পর্যন্ত অংশ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) গাজীপুর কার্যালয়। কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সড়কটির ১৩ কিলোমিটারের ওই অংশের বাঁকগুলোর ঝুঁকি বিবেচনায় দুর্ঘটনা রোধে র্যাম্বেল স্ট্রিপ (ঘন ছোট গতিরোধক) দিয়ে দেব, যেন যানবাহন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। যেসব এলাকার সড়ক নির্দেশক মুছে গেছে, সেগুলো দ্রুতই পুনর্নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/জেআইএম
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/xdnHwq4
via IFTTT