যাত্রাবাড়ীতে সেদিন কী ঘটেছিল, জানালেন খোকন চন্দ্র

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় শুরু হলো মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ। রোববার (৩ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। এই মামলার প্রথম সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণ। সেদিন কী ঘটেছিল যাত্রাবাড়ীতে ট্রাইব্যুনালে তুলে ধরেন এই জুলাই যোদ্ধা।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত নৃশংসতার প্রথম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে খোকন চন্দ্র বর্মণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় এক বিধ্বস্ত মুখ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন ২৩ বছর বয়সী এই মাইক্রোবাস চালক। জুলাইয়ের বিভীষিকা যেন তার চোখে-মুখে।

সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই তিনি নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় আন্দোলনে অংশ নেন। সেখানে সারা দিন আন্দোলন করে বাসায় ফিরে যান। পরদিন আন্দোলনের জন্য নারায়ণগঞ্জের ভূঁইগড় থেকে চাষাঢ়া এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। বিজিবি ক্যাম্পের সামনে পুলিশ ও বিজিবি তাদের ওপর গুলি চালায়। তাতে তার সামনে এক ব্যক্তির বুকে গুলি লেগে মারা যেতে দেখেন। আরও অনেকে আহত হন। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত আন্দোলনে যোগ দেন।

খোকন চন্দ্র বর্মণ আরও বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সকাল ৯টা-সাড়ে ৯টার দিকে তিনি আন্দোলনে যোগ দিতে সাইনবোর্ড এলাকায় যান। অনেকক্ষণ স্লোগান ও মিছিল করে সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন। দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী পৌঁছে দেখেন, পুলিশ গুলি করছে। একজন সেখানেই মারা যান। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী এসে ফাঁকা গুলি করলে পুলিশ যাত্রাবাড়ী থানার ভেতরে চলে যায়। এর মধ্যে খবর আসে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তখন সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার পর পুলিশ থানা থেকে বের হয়ে তাদের ওপর গুলি করতে থাকে। তখন তিনি যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে পিলারের পেছনে লুকান। পুলিশ সেখানে গিয়ে তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। সেখানে যারা ছিলেন, তাদের অধিকাংশের গায়ে গুলি লাগে এবং তার হাত ও পায়ে গুলি লাগে।

তিনি আরও বলেন, এরপর ফ্লাইওভারের নিচে থাকা ড্রামের পেছনে আশ্রয় নিলে সেখানে পুলিশ তার মাথা লক্ষ্য করে গুলি করে। কিন্তু গুলি তার চোখ, নাক ও মুখে লাগে। তিনি ট্রাইব্যুনালে মাস্ক খুলে মুখ দেখান। দেখা যায়, তার বাঁ চোখ, নাক ও মুখ পুরোটাই বিকৃত হয়ে গেছে। চিকিৎসার জন্য তাকে রাশিয়া পাঠানো হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার করে মুখ থেকে কয়েকটি গুলি বের করা হয় বলে জানান খোকন চন্দ্র বর্মণ। আগামী ১২ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় সেখানে যাবেন।

খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ’ হত্যার জন্য শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান, ওবায়দুল কাদের, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও শামীম ওসমান দায়ী এবং তাদের বিচার দাবি করছেন।

জুলাইয়ের এ নৃশংস গণহত্যার বিচার চেয়ে খোকন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক এমপি শামীম ওসমানসহ কয়েকজন নেতার বিচার দাবি করেছেন।

সাক্ষী জবানবন্দি পেশ করার পর খোকনকে জেরা করেন পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে নিয়োগ পাওয়া স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন। জেরায় কোনো অসংগতি পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে।

এফএইচ/কেএইচকে/এসএনআর/জিকেএস



from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/mWUZQYu
via IFTTT
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post