বিনিয়োগ ‘উপযুক্ত’ শেয়ারবাজার

কয়েকদিন ধরে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিললেও দীর্ঘদিন ধরে মন্দার ভেতরে ছিল দেশের শেয়ারবাজার। ফলে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা এখনও বড় লোকসানের মধ্যে রয়েছে। বছরের অধিক সময়জুড়ে মন্দা থাকায় অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম। এমনকি সার্বিক বাজারও এক প্রকার অবমূল্যায়িত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত (পিই) সাড়ে ৯-এর নিচে নেমে গেছে।

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি নির্ণয় করা হয় মূল্য আয় অনুপাত দিয়ে। সাধারণত ১০-১৫ পিইকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মুক্ত ধরা হয়। আর কোন কোম্পানির পিই ১০-এর নিচে চলে গেলে, ওই কোম্পানির শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত বা বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ধরা হয়। সে হিসাবে বর্তমান শেয়ারবাজার বিনিয়োগের জন্য অনেকটাই উপযুক্ত।

শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, নানা কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের শেয়ারবাজার মন্দার মধ্যে রয়েছে। তবে সম্প্রতি বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করলে ভালো মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিনিয়োগের আগে অবশ্যই ভালো করে তথ্য পর্যালোচনা করতে হবে। সঠিকভাবে তথ্য পর্যালোচনা করে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারলে লাভ পাওয়া যাবে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪১ পয়েন্ট। সার্বিক বাজারের থেকেও কম মূল্য আয় অনুপাত রয়েছে ৩টি খাতের। এছাড়া আরও একটি খাতের মূল্য আয় অনুপাত ১০ এর নিচে রয়েছে।

বর্তমানে সব থেকে কম পিই রয়েছে জ্বালানি খাতের। এই খাতের পিই রয়েছে ৫ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে। পরের অবস্থানে রয়েছে ব্যাংক খাত। এই খাতের পিই ৫ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট। এছাড়া সেবা খাতের পিই ৯ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট। টেক্সটাইল খাতের পিই ৯ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।

অপরদিকে, বর্তমানে সব থেকে বেশি পিই সিরামিক খাতের। এই খাতের পিই ৫৪ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট। সর্বোচ্চ পিই’র তালিকায় এর পরের স্থানে রয়েছে পাট খাত। এই খাতের পিই ২৪ দশমিক ২১ পয়েন্ট। বাকি খাতগুলোর পিই ২০ এর নিচে রয়েছে।

এর মধ্যে সিমেন্ট খাতের পিই ১০ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট, ওষুধ খাতের ১০ দশমিক ৩২ পয়েন্ট, প্রকৌশল খাতের ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ, চামড়া খাতের ১০ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট, আর্থিক খাতের ১০ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট, বিমা খাতের ১১ দশমিক ৪০ পয়েন্ট, খাদ্য খাতের ১৫ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট, আইটি খাতের ১৫ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট, বিবিধ খাতের ১৫ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট, ভ্রমণ খাতের ১৬ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট, টেলিকম খাতের ১৭ দশমিক ৩২ পয়েন্ট, মিউচুয়াল ফান্ড খাতের ১৮ দশমিক ২৭ পয়েন্ট এবং কাগজ ও মুদ্রণ খাতের ১৮ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, পিই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার, তবে একমাত্র হাতিয়ার নয়। সার্বিকভাবে পিই ১০ এর নিচে থাকলে সেই শেয়ার বিনিয়োগ উপযুক্ত মনে করা হয়। এর সঙ্গে কোম্পানির পারিপার্শ্বিক অন্যান্য বিষয়ও বিবেচনা করে বিনিয়োগ করা উচিত।

তিনি বলেন, বর্তমান শেয়ারবাজার বিনিয়োগ করার জন্য বেশ উপযুক্ত। এখন অনেক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা ভালো করে তথ্য পর্যালোচনা করে ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারলে মুনাফা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বাজার এখন ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটা প্রত্যাশিত এবং আমরা আশা করি এটার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।

কিসের ভিত্তিতে আপনারা আশা করছেন বাজার ভালোর দিকে যাচ্ছে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নির্বাচনের অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। একটা রাজনৈতিক ও নির্বাচনী রোডম্যাপ আমাদের সামনে আছে। তাছাড়া সরকার সরকার শেয়ারবাজার নিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এমএএস/এসএনআর/এমএস



from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/zBNp1RL
via IFTTT
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post