আরিফুল ইসলাম তামিম
এ যেন সবুজের বিছানা। সবুজের চাদরে মোড়ানো সমুদ্রের বিশাল চর আর মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ। রূপ বৈচিত্র্য ঘেরা এই স্থানের নাম বাড়বকুণ্ড সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রামে যে কয়েকটি সমুদ্রসৈকত আছে এর মধ্যে সবচেয়ে নির্জন ও প্রশান্তিময় সৈকত বলা হয় এটিকে।
প্রকৃতির স্নিগ্ধতা আর পরম শান্তির এই স্থানটির সৌন্দর্য হয়তো অনেকেরই অজানা। তবে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্থানটির বিভিন্ন ছবি, ভিডিও পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। নানা কারণে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে সৈকতটি।
অন্যান্য সমুদ্রসৈকতের তুলনায় বাড়বকুণ্ড সমুদ্রসৈকতে সারাবছর মানুষের ভিড় তুলনামূলক কম থাকে। কোলাহলমুক্ত এমন প্রাকৃতিক নির্জন পরিবেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের যে কোনো স্থান থেকে আপনাকে প্রথমে বাড়বকুণ্ড নামার বাজারে এসে নামতে হবে।
চট্টগ্রাম নগরের অলংকার মোড় থেকে ৮ নং সীতাকুণ্ডগামী লোকাল বাস জনপ্রতি ৩৫ টাকা ভাড়ায় নামিয়ে দেবে বাড়বকুণ্ড নামার বাজার। বাড়বকুণ্ড নামার বাজার হতে ৩ মাইল পশ্বিমে এই সমুদ্রসৈকতের অবস্থান। বাজার থেকে লোকাল সিএনজিতে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় যেতে পারবেন এখানে। তবে রিজার্ভ নিতে চাইলে ৮০-১০০ টাকা ভাড়া পড়তে পারে কিংবা দরদামের মাধ্যমে ভাড়া কম-বেশি হতে পারে।
স্থানীয়দের কাছে সমুদ্রসৈকতের স্থানটি বাড়বকুণ্ড বেড়িবাঁধ নামেও পরিচিত। গ্রামীণ আঁকা-বাঁকা সড়ক, বিভিন্ন গাছগাছালি, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, গ্রামীণ সজীবতা, হিমশীতল হাওয়া, সারি সারি খেজুর গাছের অপূর্ব দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন বেড়িবাঁধের এই স্থানে অর্থাৎ সমুদ্রসৈকতে।
শীত ও বর্ষা মৌসুমে বিচিত্র সৌন্দর্য ধারণ করে সমুদ্রসৈকতটি। বর্তমানে শীত মৌসুমে অতিথি পাখির ঝাঁক, সবুজে ঘেরা বিস্তীর্ণ সমুদ্র পাড়, জেলেদের মাছধরার দৃশ্য, সন্ধ্যার পর সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে বাতাসের হু-হু আওয়াজ, সুন্দর আকৃতির ঝাউ বাগানের দৃশ্য, নানা ধরনের পাখির কিচিরমিচির শব্দে মনে হবে এ এক অন্যরকম রূপকথার জগৎ।
বেড়িবাঁধ থেকে দাঁড়িয়ে দেখা সমুদ্রসৈকতের দৃশ্য ছবির মতোই সুন্দর। যত কাছে যাওয়া যায় ততই এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় দর্শনার্থীরা। সমুদ্রসৈকতে যাওয়ার পথে সারি সারি মাছ ধরার লালবোট, জেলেদের জালবুননের দৃশ্য, কর্মব্যস্ত মাঝি-মাল্লাদের গানের সুর, ফুল-ফলের গাছ, বকের ছোটাছুটি, জোয়ারের সময় সমুদ্রের বিশাল ঢেউ পর্যটকদের অন্যরকম প্রশান্তি এনে দিবে।
বিকেল হলেই এই সমুদ্রে সবুজ ঘাসের চরে অনেক তরুণ ফুটবলসহ নানা খেলাধুলায় মেতে ওঠে। শহুরে যান্ত্রিক জীবনকে ছুটি দিয়ে দূর দূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিতে তাঁবুতে রাত্রিযাপনের জন্য ছুটে আসেন এই সমুদ্রসৈকতে।
বর্তমানে কুয়াশার চাদরে মোড়ানো শীতের সকালে সূর্যোদয় আর নরম সূর্যের আলোর নরম স্পর্শ নিতে চাইলে ভ্রমণপিপাসুদের এখানে আসতেই হবে। তাছাড়া সমুদ্রের শান্ত ঢেউয়ের সঙ্গে সূর্যের লুকিয়ে পড়া অর্থাৎ গোধূলি বেলায় সূর্যাস্ত এই সমুদ্র সৈকতের পরিবেশকে আরো রোমাঞ্চকর করে তোলে।
এই সমুদ্রসৈকতের চারপাশ ও গ্রামীণ পথের দু’পাশ ঘিরে রয়েছে শত শত খেজুর গাছ। ভ্রমণপিপাসুরা এখানে আসলে সারি সারি খেজুর গাছের দৃশ্য উপভোগের পাশাপাশি চাইলে খেজুর রস কিনেও খেতে পারবেন। প্রতিদিন রাত তিনটায় ও সকাল সাত টায় দুই ধাপে খেজুর রস নামায় এখানকার গাছিরা।
সমুদ্রসৈকতটি বড় ইলিশ মাছের জন্যও বেশ বিখ্যাত। তবে সেটি বর্ষা মৌসুমে বেশি পাওয়া যায়। বর্তমানে শীত মৌসুমে এখানকার জেলেরা কিছুটা কষ্টে দিনপাত করে, কথা হয় স্থানীয় জেলে বিশ্বনাথের সঙ্গে। তিনি জানান, শীতে এখন মাছ কম পাওয়া যায়। দিনের দুপুর দুইটা কিংবা রাতে সমুদ্রে কিছু চিংড়ি মাছ পাওয়া যায়। এসব বিক্রি করে আমাদের সংসার চলে।
তবে বর্ষা মৌসুমে এখানে বেশ ভালো মাছ পাওয়া যায়। চট্টগ্রামে যতগুলো সমুদ্রের পয়েন্ট আছে, তার মধ্য এই পয়েন্টেই সবচেয়ে বেশি বড় বড় ইলিশ মাছ পাওয়া যায় যা সন্ধ্যার পর আসলেই যে কেউ কিনে নিতে পারেন। ইলিশ ছাড়াও বর্ষায় চিংড়ি, পোয়া মাছ, সামুদ্রিক পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়ে।
পর্যটনের অপার সম্ভাবনা বাড়বকুণ্ড সৈকতে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও পর্যটন সুবিধা গড়ে তোলা হলে এটি চট্টগ্রামের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। তবে অবশ্যই পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
লেখক: চতুর্থ বর্ষ, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম।
জেএমএস/জিকেএস
from jagonews24.com | rss Feed https://ift.tt/tkFHfz6
via IFTTT